বর্তমান পৃথিবী যেভাবে আধুনিকতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তার সাথে তাল মিলিয়ে অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসাগুলোও অতিদ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করতে সক্ষম হয়েছে। অনলাইন ভিত্তিক ব্যবসার ধারণার উদয় হয়েছে চলমান দশকে। এই অনলাইন ব্যবসা উদ্যোক্তাদের জন্য ব্যবসা শুরু করার ক্ষেত্রে পছন্দের তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করতে পারে।
এর কারণ হচ্ছে, একটি অনলাইন ব্যবসা শুরু করতে চাইলে খুব কম বিনিয়োগ করার মাধ্যমেই শুরু করা যায় এবং প্রচলিত ব্যবসাগুলোর তুলনায় অনলাইন ব্যবসায় খুব একটা মাথা ঘামাতে হয় না। তাছাড়া প্রচলিত ব্যবসাগুলোর ক্ষেত্রে আপনি আপনার ব্যবসাটিকে শুধুমাত্র আপনার শহর বা দেশের মাঝে প্রসারিত করতে পারবেন এবং আপনাকে টাকার কথাও ভাবতে হবে।কিন্তু অনলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রে আপনি অতি সহজে সমগ্র পৃথিবীর মানুষকে টার্গেট করতে পারবেন।

অনলাইন ব্যবসার মাধ্যমে আপনি তখনই লাভবান হতে পারবেন যখন এই ব্যবসা সম্পর্কে আপনার প্রচুর পরিমাণ জ্ঞান থাকবে। মনে রাখবেন, যেকোনো ব্যবসাই প্রতিযোগিতামূলক হয়ে থাকে। তাই অনলাইন ব্যবসার ক্ষেত্রে আপনাকে এমন কিছু করতে হবে যেটা মানুষ পছন্দ করবে। আপনি যদি কোন রকম বিনিয়োগ ছাড়া কোন অনলাইন ব্যবসা করার কথা ভাবেন তবে এই আর্টিকেলটি গুরুত্ব সহকারে পড়ুন। নিচে দশটি লাভজনক অনলাইন ব্যবসার ধারণা দেয়া হল যা আপনি চাইলে আজই শুরু করে দিতে পারেন।
১. ব্লগিং
একজন ব্লগার হিসেবে আমি ব্লগিংকে এই তালিকার শীর্ষে রাখবো। কেননা অতি ক্ষুদ্র পরিমাণ ইনভেস্ট এর মাধ্যমে আপনি ব্লগিং করে আয় করতে পারবেন। এছাড়া আপনি চাইলে মানসম্পন্ন আর্টিকেল লিখে অথবা কন্টেন্ট মার্কেটিংয়ের মাধ্যমে আয় করতে পারেন। ব্লগিংয়ের ক্ষেত্রে হোস্টিং এবং ডোমেইন ক্রয় করার জন্য আপনাকে কিছু পরিমাণ অর্থ খরচ করতে হবে যা অতি নগণ্য। এছাড়া ব্লগিং করার সময় আপনি গুগল এডসেন্সের মাধ্যমে বা কোনো কোম্পানির বিভিন্ন ধরনের পণ্য প্রমোট করার মাধ্যমে ভালো পরিমাণ আয় করতে পারবেন।

মনে রাখবেন ব্লগিং মানে শুধুমাত্র মানসম্পন্ন আর্টিকেল লেখা নয়। ব্লগিং করার সময় সঠিক কি-ওয়ার্ড সার্চ, অনপেজ এসইও (SEO), অফ পেজ এসইও এবং কনটেন্ট মার্কেটিংয়ের দিকে নজর রাখুন। এ বিষয়গুলোর দিকে লক্ষ্য রেখে ব্লগিং করলে আপনি ভাল কিছু উপার্জন করতে পারবেন।
২. ইউটিউব চ্যানেল
আপনি যদি এমন ধরনের ভিডিও তৈরি করতে পারেন যা মানুষের কাছে ভালো লাগবে এবং তা থেকে আয় করতে চান তবে ইউটিউব আপনার জন্য বিরাট একটি প্লাটফর্ম হতে পারে। আপনি ইউটিউবে একটি চ্যানেল খুলে সেখানে রান্নাবান্না থেকে শুরু করে প্র্যাংক যে কোনো ধরনের ভিডিও আপলোড করতে পারেন। তবে এমন ধরনের ভিডিও তৈরি করার চেষ্টা করুন যা আগে কেউ করেনি।

অন্যের তৈরি ভিডিও আপনি যদি আপনার চ্যানেলে আপলোড করেন তবে ইউটিউব আপনার ভিডিওকে কপিরাইট হিসেবে গণ্য করবে এবং আপনার চ্যানেল ক্ষতিগ্রস্ত হবে। আপনার তৈরি কোন ভিডিও যদি ইন্টারনেটে ভাইরাল হয় তবে তা থেকে আপনি যতটুকু আয় করার কথা ভেবেছিলেন তার থেকে এত বেশি পরিমাণ আয় করতে পারেন। ফোর্বসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেরা ইউটিউবার পিউডিপাই ইউটিউব থেকে বছরে প্রায় ১২ মিলিয়ন ডলার আয় করে থাকেন। তাই আপনি চাইলে আজই ইউটিউব চ্যানেল খুলে আয়ের পথ তৈরি করতে পারেন।
৩. ওয়েব ডিজাইনিং
ওয়েব ডিজাইনিং আপনার জন্য একটি ভাল অনলাইন ব্যবসা হতে পারে যা আপনি ২০১৮ সালে শুরু করতে পারেন। বিগত কয়েক বছর ধরে ওয়েব ডিজাইনিং এর চাহিদা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে উন্নত দেশগুলোর অনেক ওয়েবসাইট যেমন আপওয়ার্ক, ফ্রিল্যান্সার ডট কম ইত্যাদি পৃথিবীর বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশের ওয়েব ডিজাইনিংয়ে দক্ষ লোকদের ভাড়া করে তাদের কাজগুলো করিয়ে নেয়।

এর ফলে উন্নয়নশীল দেশের ফ্রিল্যান্সাররা উন্নত দেশগুলোর কাছে থেকে অনেক বেশি রেট পায়। এভাবে বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশের লোকজন তাদের ওয়েব ডিজাইনিং ক্যারিয়ার ফ্রিল্যান্সার হিসেবে শুরু করে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং পরবর্তীতে নিজেদের কাজ গুলো বিভিন্ন ফ্রিল্যান্সারকে ভাড়া করার মাধ্যমে করিয়ে থাকে।
৪. অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভলপমেন্ট
বর্তমানে স্মার্টফোনের বাজারে অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম চালিত ফোনগুলো অনেক বেশি পরিমাণ জায়গা দখল করতে সক্ষম হয়েছে। যা আইওএস অপারেটিং সিস্টেমের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী।

আর এই কথাটি মাথায় রেখে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপ ডেভেলপমেন্টকে আপনি যদি ব্যবসা হিসেবে নেন তবে এই চলতি দশকে তো আপনি লাভবান হবেনই, উপরন্তু পরবর্তী দশকেও আপনার লাভবান হওয়ার অপার সম্ভাবনা রয়েছে।
৫. অনলাইন গ্রোসারি শপ
অনলাইন গ্রোসারী শপ যখন হাতের মুঠোয় এসে গেছে তখন কেই বা চায় তাদের সাপ্তাহিক ছুটির দিনটি বিভিন্ন গ্রোসারি শপে ঘুরে ঘুরে নষ্ট করতে? এই অনলাইন গ্রোসারি শপের মাধ্যমে যে কেউ ঘরে বসে অতি সহজে সামান্য কিছু চার্জের বিনিময়ে তাদের কাঙ্ক্ষিত পণ্যটি ঘরের দরজায় পেতে পারে।

আপনি যদি স্থানীয় বাজারে একটি দোকান শুরু করেন, তবে আপনি শুধুমাত্র স্থানীয় ক্রেতাই পাবেন। কিন্তু আপনি যদি অনলাইন গ্রোসারি শপের ব্যবসা শুরু করেন তবে পুরো শহরের ক্রেতা পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এতে করে আপনি দ্রুত লাভবান হতে পারবেন। তাই আজই নিজের অনলাইন দোকানের কাজটি শুরু করে দিন!
৬. অনলাইন টিউটরিং
আপনি যদি শিক্ষক হন অথবা শিক্ষাদান করতে পছন্দ করেন তবে অনলাইন টিউটরিং আপনার জন্য একটি সেরা অপশন হতে পারে। এক্ষেত্রে আপনার পকেট থেকে কোন টাকা খরচ করতে হবে না। কেননা এই কাজটি করার জন্য আপনার না কোন ক্লাস রুমের দরকার হবে, না কোন মার্কেটিং বাবদ খরচ করতে হবে। আপনি বিভিন্ন ধরনের শিক্ষামূলক ওয়েবসাইটে যুক্ত হয়ে আপনার পছন্দের বিষয়ের উপর শিক্ষাদান করতে পারবেন। এভাবে আপনার যেমন অভিজ্ঞতা বাড়বে, তেমনি কিছু টাকাও রোজগার হবে।
৭. অনলাইন কোর্স
অনলাইন টিউটরিংয়ের পাশাপাশি আপনি চাইলে বিভিন্ন ধরনের অনলাইন ভিত্তিক কোর্সও করাতে পারেন। আপনি যেকোন ধরনের কোর্স করাতে পারেন যা মানুষের উপকারে আসবে। যেমন আপনি গণিত, ইংলিশ স্পিকিং, মার্কেটিং, মানি মেকিং ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ের উপর কোর্স করাতে পারেন।
আপনি চাইলে কোর্সগুলো আপনার নিজস্ব ব্লগ বা ওয়েবসাইটে প্রমোট করতে পারেন। এর ফলে আপনাকে তৃতীয় কোন পক্ষকে কমিশন দিতে হবে না এবং আপনি অনেক বেশি পরিমানে আয় করতে পারবেন।
৮. ই-কমার্স ওয়েবসাইট
আপনি যদি চলমান বাজারদরের থেকে সস্তায় কিছু পণ্য কিনে রাখতে পারেন তবে পরবর্তীতে সেগুলো বিভিন্ন ধরনের ই-কমার্স ওয়েবসাইটের বিক্রির মাধ্যমে ভাল পরিমান টাকা আয় করতে পারবেন। আপনি আপনার পণ্যগুলো ইবে অথবা অ্যামাজনের মতো বিশ্বস্ত ই-কমার্স ওয়েবসাইটগুলোতে বিক্রি করতে পারবেন।

এখানে আপনি আপনার পণ্যের বিবরণ, ছবি এবং দাম নির্ধারণ করে আপলোড করার মাধ্যমে অতি সহজে বিক্রয় করতে পারবেন। তবে এই সাইটগুলোতে বিক্রেতা হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করার সময় আপনাকে কিছু পরিমাণ বিক্রয় শুল্ক দিতে হবে।
৯. সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট
অনেক সেলেব্রিটি সহ বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা প্রায়ই তাদের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট যেমন ফেসবুক পেজ, টুইটার প্রোফাইল এবং ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্ট প্রচারের উদ্দেশ্যে লোক ভাড়া করেন। এই ভাড়া করা লোকগুলোর কাজ হচ্ছে সেলেব্রিটি বা মালিকের অ্যাকাউন্ট গিয়ে বিভিন্ন পোস্ট করা, টুইটের রিপ্লাই দেয়া, কমেন্টের রিপ্লাই দেয়া। এভাবেই সেলিব্রেটিগণ তাদের ফ্যান ও ফলোয়ারের সংখ্যা বাড়াতে থাকেন এবং সোশ্যাল মিডিয়াগুলো থেকে ভালো পরিমাণ আয় করেন।
আপনি চাইলে তাদের মতো আয় করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনাকে সোশ্যাল মিডিয়াগুলোতে জনপ্রিয়তা বাড়াতে হবে। আপনার ফ্যান- ফলোয়ারের সংখ্যা বাড়াতে হবে। আপনি যদি সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষজ্ঞ হয়ে থাকেন তবে বিভিন্ন কোম্পানি বা সেলেব্রেটির হয়ে কাজ করতে পারেন এবং ইনকাম করতে পারেন।
১০. পিওডি ওয়েবসাইট
আপনার যদি সৃজনশীল ক্ষমতা থেকে থাকে এবং আপনি যদি টি-শার্ট, মগ, ওয়ালেট ইত্যাদিতে ভালো ডিজাইন করতে পারেন তবে পিওডি ওয়েবসাইটগুলো আপনার অপেক্ষায় রয়েছে। পিওডি ওয়েবসাইটগুলো ‘প্রিন্ট অন ডিম্যান্ড’ এর উপর ভিত্তি করে তৈরি। এই ধরণের ওয়েবসাইটে কাজ করার জন্য আপনাকে কোন প্রকার বিনিয়োগ করতে হবে না।

এখানে আপনি বিভিন্ন ধরনের পণ্যে ডিজাইন করবেন যা এই ওয়েবসাইটে ভিজিট করা হাজারও মানুষ দেখবে। আপনার করা ডিজাইনটি কোনো ক্রেতার পছন্দ হলে সেই ডিজাইনটি কাঙ্ক্ষিত পণ্যের উপর ছাপা হবে। এভাবেই আপনি এখান থেকে আয় করতে পারবেন। পিওডি ওয়েবসাইটগুলোর মধ্যে ক্যাফেপ্রেস ও জ্যাজল সর্বাধিক জনপ্রিয়।
উপরিউক্ত ব্যবসা গুলোর মধ্যে আপনি যেকোনোটি বেছে নিতে পারেন। তবে আপনাকে সফল হতে হলে পরিশ্রমী হতে হবে এবং নিরাশ হলে চলবে না। কোন ব্যবসা শুরু করার আগে সেই ব্যবসা সম্পর্কে খুঁটিনাটি জানার চেষ্টা করুন। তবেই আপনি সফল হতে পারবেন। তাহলে এই দশটি ব্যবসার মধ্যে থেকে আজই কোনো একটি শুরু করে দিন এবং আয় করতে থাকুন।
ফিচার ইমেজঃ smartzon.og.ng